রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঁচা মরিচের কেজি ২৮০, সবজির দাম ঘাম ছুটাচ্ছে ক্রেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪ | প্রিন্ট

কাঁচা মরিচের কেজি ২৮০, সবজির দাম ঘাম ছুটাচ্ছে ক্রেতাদের

বন্যা আর বৃষ্টির অজুহাতে ফের টালমাটাল রাজধানীর কাঁচাবাজার। অধিকাংশ সবজির দাম পৌঁছেছে কেজি ১০০ টাকার ঘরে। কোনোটির দাম আবার সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও ক্ষান্ত হয়নি, বরং পৌঁছেছে ১২০ টাকার ঘরে। ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে কেবল পটল, মিষ্টিকুমড়া আর পেঁপে। অপরদিকে কোনোমতেই ঝাল কমছে না কাঁচা মরিচের। এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতে খুচরা বাজারে গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ২৮০ টাকা। এমন অবস্থায় বেশ বিপাকেই পড়েছেন ক্রেতারা। নিত্য প্রয়োজনীয় শাকসবজির এমন অস্বাভাবিক দামে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে তাদের।

শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বনলতা কাঁচাবাজারের ভেতর ও বাইরের দোকান এবং ধানমন্ডি এলাকার বেশ কয়েকটি ভাসমান সবজির দোকান ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অথচ এই কাঁচা মরিচ গত সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছিলো ২০০ টাকা কেজি দরে। আর অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত।

সবজির মধ্যে ৫০ টাকা কেজি দরে মিলছে কেবল মিষ্টি কুমড়া, পটল আর পেঁপে। এছাড়া বেগুন ৮০-১২০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, বরবটি ১১০-১২০ টাকা, কচুর মুখি ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, গাজর ৮০-৯০ টাকা, ঢেঁরস ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, আলু ৬০ টাকা এবং ধুন্দল ৬০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি পিস লাউ, বাঁধাকপি ও ফুলকপি আকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। শাকসবজির দামও চড়া। লালশাক, পালংশাকসহ যেসব আঁটি আগের সপ্তাহগুলোতে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হতো সেগুলো এখন ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

শান্তি নেই মশলার বাজারেও। পেঁয়াজ, রসুন, আদাও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামেই। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা, রসুন ২১০-২২০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪০০-৫০০ টাকা, হলুদ ৩৫০-৪০০ টাকা, আদা ৩০০-৫০০ টাকা, জিরা ৮৫০ টাকা এবং দারচিনি ৬০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

 

ঢাকা মহানগরীর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বাজার দর পর্যালোচনায় খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ১ সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিলো। ১ মাস আগে এর দাম ছিল ৮৫ টাকা। আর ১ বছর আগে এর দাম ছিল ৮০ টাকা। বাৎসরিক হিসেবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর রসুনের দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।

 

কাঁচাবাজারের এমন বাড়ন্ত দামের ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় সব সবজিই বাইরে থেকে আসে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জায়গায় বন্যা এবং গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির পরিমাণ কম। যার কারণে বাড়তি দাম দিয়েই পাইকারি অর্থাৎ আড়ত থেকে সবজি কিনতে হচ্ছে। সেই প্রভাবই পড়েছে খুচরা বাজারে।

 

আবু হানিফ নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আজকে সবজি কিনতে হয়েছে। অন্যান্য সময় সবজি নিয়ে যে পরিমাণ ট্রাক ঢাকায় আসতো এখন তেমনটি নেই। চাহিদা যেটার বেশি সেটার দামই বেশি। আর কাঁচা মরিচের দাম তো ঈদের সময় থেকেই বেশি ছিল। এখন আবার বন্যা হয়েছে তাই খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে।

 

বৃষ্টি ও বন্যার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কাঁচাবাজারে মরিচের সরবরাহ কমে গেছে এবং আমদানিও কম হচ্ছে বলে জানান আরেক বিক্রেতা আবুল কালাম। তিনি বলেন, বাড়তি দামে আমাদের হাত নেই। বৃষ্টি হচ্ছে বেশি। সেজন্য সবজির পরিমাণ কমে গেছে। বৃষ্টি থামলে আবারও দাম কমে আসবে।

অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, কাঁচাবাজারের এমন বাড়তি দামের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বাজার করছেন তারা।

 

মাহমুদুল হাসান নামের এক ক্রেতা বলেন, খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই সবজি, কাঁচা মরিচসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা বলেন উৎপাদন কমে গেছে। তাহলে দুর্যোগের কথা চিন্তা করে কি কোনো মজুত রাখা হয় না? আসলে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অথবা পণ্য মজুত করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এগুলো মনিটরিংয়ের কেউ নেই। ভোক্তাপর্যায়ে আমাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢাকায় যদি সরাসরি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা যেতো তবে সাধারণ মানুষের উপকার হতো। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি কমবে।

 

বাশার আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রম হয় কি না তা জানি না। সরকারের উদ্যোগে এটি প্রয়োজন। না হলে জীবনযাপন করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এই কয়েকদিনের বৃষ্টি আর বন্যার অজুহাতে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কোথায় যাই। কাঁচাবাজারে সবাই নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি কিনে। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:৩২ | শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com